পাইরিফর্মিস সিনড্রোম (Piriformis Syndrome)
পাইরিফর্মিস সিনড্রোম( Piriformis Syndrome) একটি স্নায়ু পেশীর রোগ যেখানে পাইরিফর্মিস পেশী piriformis muscle(নিতম্বের গভীরে অবস্থিত একটি ছোট পেশী) সায়াটিক স্নায়ুর (Sciatic nerve) উপর চাপ সৃষ্টি করে। সায়াটিক স্নায়ু হল শরীরের দীর্ঘতম স্নায়ু, যা কোমর থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত বিস্তৃত। যখন পাইরিফর্মিস পেশী সংকুচিত বা শক্ত হয়ে যায়, তখন এটি সায়াটিক স্নায়ুকে সংকুচিত করতে পারে, যার ফলে নিতম্বে, উরুতে এবং কখনও কখনও পায়ের নিচের দিকে ব্যথা, অসাড়তা এবং ঝিঁঝিঁ অনুভূতি হতে পারে।
কারণ:
পাইরিফর্মিস সিন্ড্রোমের সম্ভাব্য কারণ রয়েছে:
* পাইরিফর্মিস পেশীর খিঁচুনি বা সংকোচন: অতিরিক্ত ব্যবহার, আঘাত বা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার কারণে এটি হতে পারে।
* শারীরিক আঘাত: নিতম্বে সরাসরি আঘাত, যেমন পড়ে যাওয়া বা গাড়ি দুর্ঘটনা।
* অতিরিক্ত ব্যবহার: দৌড়ানো, সাইকেল চালানো বা অন্যান্য পুনরাবৃত্তিমূলক কার্যকলাপ যা নিতম্বের পেশীর উপর চাপ সৃষ্টি করে।
* দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা: বিশেষ করে শক্ত বা অস্বস্তিকর স্থানে বসা।
* নিতম্বের অস্বাভাবিক গঠন: কিছু লোকের নিতম্বের পেশী বা সায়াটিক স্নায়ুর স্বাভাবিক গঠনগত ভিন্নতা থাকতে পারে যা সিন্ড্রোমের ঝুঁকি বাড়ায়।
* পেশীর দুর্বলতা: নিতম্বের অন্যান্য পেশী দুর্বল হলে পাইরিফর্মিস পেশীর উপর অতিরিক্ত চাপ পড়তে পারে।
লক্ষণ:
পাইরিফর্মিস সিন্ড্রোমের প্রধান লক্ষণ হল নিতম্বে ব্যথা, যা ধীরে ধীরে শুরু হতে পারে এবং তীব্র হতে পারে। অন্যান্য লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:
* নিতম্ব থেকে উরু, পায়ের পিছনের দিকে এবং কখনও কখনও পায়ের পাতা পর্যন্ত ব্যথা ছড়িয়ে পড়া (সায়াটিকার মতো)।
* ব্যথা সাধারণত এক দিকে হয়ে থাকে।
* দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা, দাঁড়ানো বা হাঁটার পরে ব্যথা বেড়ে যাওয়া।
* নিতম্বের স্পর্শকাতরতা।
* অসাড়তা বা ঝিঁঝিঁ অনুভূতি নিতম্বে বা পায়ের দিকে।
* হাঁটু বা পায়ের দুর্বলতা (বিরল ক্ষেত্রে)।
* বসার সময় ব্যথা বেড়ে যাওয়া এবং কোমর ঘোরানো বা পা ঘোরানোর সময় তীব্র হওয়া।
রোগ নির্ণয়:
পাইরিফর্মিস সিন্ড্রোম নির্ণয় করা কঠিন হতে পারে কারণ এর কোনো নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা নেই। রোগ নির্ণয় সাধারণত রোগীর ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা এবং অন্যান্য সম্ভাব্য কারণগুলি বাদ দেওয়ার উপর ভিত্তি করে করা হয়। শারীরিক পরীক্ষার সময়, ডাক্তার নিতম্বের নির্দিষ্ট অংশে চাপ প্রয়োগ করে বা কিছু বিশেষ মুভমেন্ট করতে বলে ব্যথা অনুভব করছেন কিনা তা পরীক্ষা করতে পারেন(FAIR test)
কিছু ক্ষেত্রে, ডাক্তার অন্যান্য অবস্থা বাদ দেওয়ার জন্য ইমেজিং পরীক্ষা (যেমন এক্স-রে, এমআরআই) বা স্নায়ু পরিবাহী পরীক্ষা (যেমন NCS, EMG-ইএমজি) করাতে পারেন। যদিও এই পরীক্ষাগুলি সরাসরি পাইরিফর্মিস সিন্ড্রোম দেখাতে পারে না, তবে তারা সায়াটিক স্নায়ুর উপর চাপের অন্যান্য কারণ (যেমন হার্নিয়েটেড ডিস্ক) করতে সাহায্য করতে পারে।
চিকিৎসা:
পাইরিফর্মিস সিন্ড্রোমের চিকিৎসার বিভিন্ন উপায় রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে
বিশ্রাম,
বরফ ও তাপ প্রয়োগ,
স্ট্রেচিং এবং ব্যায়াম,
ফিজিওথেরাপি,
ওষুধ এবং কিছু ক্ষেত্রে
ইনজেকশন বা সার্জারি।
চিকিৎসার লক্ষ্য হল ব্যথা কমানো, পেশীর সংকোচন হ্রাস করা এবং স্বাভাবিক কার্যকারিতা ফিরিয়ে আনা।
পাইরিফর্মিস সিন্ড্রোম একটি কষ্টকর অবস্থা হতে পারে যা দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে। সঠিক রোগ নির্ণয় এবং উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে বেশিরভাগ রোগী উল্লেখযোগ্য উন্নতি লাভ করতে পারে।