আঘাতজনিত কারণে (Traumatic) কোমরের মেরুদণ্ডের স্থিতিশীলতা (Lumbar stabilization) নিশ্চিত করার জন্য যে সার্জারি করা হয়, তা সাধারণত জরুরি পরিস্থিতিতে করা হয়ে থাকে। এটি সড়ক দুর্ঘটনা, উঁচু স্থান থেকে পড়ে যাওয়া, বা খেলার সময় আঘাতের ফলে ঘটে যাওয়া গুরুতর মেরুদণ্ডের আঘাতের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের আঘাতের ফলে মেরুদণ্ডের কশেরুকা (vertebrae) ভেঙে যেতে পারে, মেরুদণ্ডের লিগামেন্ট বা ডিস্ক ছিঁড়ে যেতে পারে, যা মেরুদণ্ডকে মারাত্মকভাবে অস্থিতিশীল করে তোলে।

১. নিউরোলোজিক্যাল ডিকম্প্রেশন (Neurological Decompression): আঘাতের ফলে মেরুদণ্ডের স্নায়ুর (spinal cord and nerves) উপর চাপ পড়তে পারে, যা পক্ষাঘাত (paralysis), অনুভূতিহীনতা (numbness), বা দুর্বলতা (weakness) সৃষ্টি করতে পারে। সার্জারির মাধ্যমে এই চাপ সরিয়ে স্নায়ুকে মুক্ত করা হয়, যা স্নায়ুর ক্ষতির পরিমাণ কমাতে এবং সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে সাহায্য করে।

২. মেকানিক্যাল স্ট্যাবিলাইজেশন (Mechanical Stabilization): আঘাতের ফলে কশেরুকাগুলো ভেঙে গিয়ে বা স্থানচ্যুত হয়ে (displaced) গেলে মেরুদণ্ড অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। এই অস্থিতিশীলতা যদি চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে মেরুদণ্ডের স্নায়ুর আরও ক্ষতি হতে পারে। সার্জারির মাধ্যমে ভাঙা কশেরুকাগুলোকে সঠিক অবস্থানে ফিরিয়ে এনে স্ক্রু, রড এবং প্লেট ব্যবহার করে স্থায়ীভাবে স্থিতিশীল করা হয়।

৩. প্রিভেনশন অফ ফিউচার ড্যামেজ (Prevention of Future Damage): মেরুদণ্ডের অস্থিতিশীলতা ভবিষ্যৎতে আরও নিউরোলোজিক্যাল ক্ষতি বা বিকৃতি (deformity) ঘটাতে পারে। ট্রমাটিক সার্জারির মাধ্যমে এই ঝুঁকি কমানো হয় এবং মেরুদণ্ডকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়।

ট্রমাটিক লাম্বার স্ট্যাবিলাইজেশন সার্জারি সাধারণত নিম্নলিখিত আঘাতের ক্ষেত্রে করা হয়:

* কম্প্রেশন ফ্র্যাকচার (Compression Fracture): যখন কশেরুকা ভেঙে চ্যাপ্টা হয়ে যায়। যদি ফ্র্যাকচারটি গুরুতর হয় এবং মেরুদণ্ডকে অস্থিতিশীল করে তোলে, তাহলে সার্জারি প্রয়োজন হয়।

* বার্স্ট ফ্র্যাকচার (Burst Fracture): যখন কশেরুকাটি একাধিক অংশে ভেঙে যায় এবং হাড়ের টুকরাগুলো মেরুদণ্ডের স্নায়ুর দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এটি একটি অত্যন্ত গুরুতর আঘাত এবং জরুরি সার্জারি প্রয়োজন।

* ফ্র্যাকচার-ডিসলোকেশন (Fracture-Dislocation): যখন কশেরুকা ভেঙে যায় এবং তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে সরে যায়। এটি মেরুদণ্ডের একটি মারাত্মক অস্থিতিশীল অবস্থা এবং তাৎক্ষণিক সার্জারির প্রয়োজন হয়।

* লিগামেন্টাস ইনজুরি (Ligamentous Injury): যখন মেরুদণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ লিগামেন্টগুলো ছিঁড়ে যায়, যা মেরুদণ্ডকে অস্থিতিশীল করে তোলে।

ট্রমাটিক লাম্বার স্ট্যাবিলাইজেশন সার্জারিতে সাধারণত যে পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা হয়:

* ডিকম্প্রেশন (Decompression): প্রথমে মেরুদণ্ডের স্নায়ুর উপর থেকে চাপ অপসারণ করা হয়। এর জন্য ল্যামিনেক্টমি (Laminectomy) বা অন্য কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করে হাড়ের টুকরা, ডিস্কের অংশ বা অন্য কোনো চাপ সৃষ্টিকারী উপাদান সরিয়ে ফেলা হয়।

* ফিক্সেশন বা ফিউশন (Fixation or Fusion): চাপ অপসারণের পর মেরুদণ্ডকে স্থিতিশীল করা হয়।

* পেডিকল স্ক্রু এবং রড (Pedicle Screws and Rods): এটি সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি। কশেরুকার পেডিকলে স্ক্রু বসানো হয় এবং তারপর এই স্ক্রুগুলোকে রড দিয়ে সংযুক্ত করা হয়। এটি ভাঙা কশেরুকাগুলোকে সঠিক অবস্থানে ধরে রাখে এবং মেরুদণ্ডকে স্থায়ীভাবে স্থিতিশীল করে।

* ফিউশন (Fusion): একই সাথে হাড়ের গ্রাফট ব্যবহার করা হয় যাতে কশেরুকাগুলো ধীরে ধীরে ফিউজ হয়ে একটি একক হাড়ে পরিণত হয়। এটি দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে।

আঘাতজনিত ক্ষেত্রে ট্রমাটিক লাম্বার স্ট্যাবিলাইজেশন সার্জারি রোগীর জীবন এবং মেরুদণ্ডের স্নায়ুর কার্যকারিতা রক্ষা করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সার্জারি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করা উচিত, বিশেষ করে যদি স্নায়ুর উপর গুরুতর চাপ থাকে।

সার্জারির পর পুনর্বাসন প্রক্রিয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটি সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী হয় এবং এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে:

* হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণ।

* ব্যথার ঔষধ সেবন।

* ধীরে ধীরে নড়াচড়া শুরু করা।

* ফিজিওথেরাপি: পেশি শক্তিশালী করা এবং গতিবিধি স্বাভাবিক করার জন্য পেশাদার ফিজিওথেরাপিস্টের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা।

* ব্রেস (brace) ব্যবহার: কিছু ক্ষেত্রে, মেরুদণ্ডকে অতিরিক্ত সাপোর্ট দেওয়ার জন্য ব্রেস ব্যবহার করা হয়।

ট্রমাটিক মেরুদণ্ড সার্জারি একটি জটিল প্রক্রিয়া, যা বিশেষজ্ঞ মেরুদণ্ড সার্জনের তত্ত্বাবধানে করা হয়। এই সার্জারির সফলতা নির্ভর করে আঘাতের ধরন ও তীব্রতা, রোগীর সার্বিক স্বাস্থ্য, এবং সঠিক পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার উপর।