কেয়ারি মালফর্মেশন (Chiari malformation)
কেয়ারি মালফর্মেশন (Chiari malformation) একটি জটিল রোগ যেখানে মস্তিষ্কের কিছু অংশ (সাধারণত ছোটমস্তিষ্কের cerebellum অংশ) খুলির পেছনের দিকে অবস্থিত ছিদ্র (ফোরামেন ম্যাগনাম) দিয়ে স্পাইনাল ক্যানেলে নেমে আসে। এর ফলে মস্তিষ্কের উপর চাপ সৃষ্টি হয় এবং বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে পারে। কেয়ারি মালফর্মেশনের চিকিৎসার জন্য সার্জারি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প, বিশেষ করে যখন উপসর্গগুলি গুরুতর হয় এবং রোগীর জীবনযাত্রার মান কমিয়ে দেয়।
কেয়ারি মালফর্মেশনের সার্জারির মূল লক্ষ্য: মস্তিষ্কের উপর চাপ কমানো এবং সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইডের (CSF) স্বাভাবিক প্রবাহ পুনরুদ্ধার করা।
বিভিন্ন ধরনের সার্জিক্যাল পদ্ধতি রয়েছে এবং রোগীর কেয়ারি মালফর্মেশনের ধরন ও উপসর্গের তীব্রতার উপর নির্ভর করে কোন পদ্ধতিটি সবচেয়ে উপযুক্ত তা নির্ধারণ করা হয়।
কয়েকটি প্রধান সার্জিক্যাল পদ্ধতি:
* পোস্টেরিয়র ফোসা ডিকম্প্রেশন (Posterior Fossa Decompression): এটি কেয়ারি মালফর্মেশনের জন্য প্রচলিত সার্জিক্যাল পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে খুলির পেছনের দিকের হাড়ের একটি ছোট অংশ এবং ক্ষেত্রবিশেষে প্রথম কশেরুকার (C1) কিছু অংশ অপসারণ করা হয়। এর ফলে মস্তিষ্কের জন্য আরও জায়গা তৈরি হয় এবং চাপ কমে। অনেক ক্ষেত্রে, ডুরা মেটার (মস্তিষ্ক ও স্পাইনাল কর্ডের বাইরের স্তর) খোলা হয় এবং একটি প্যাচ (কৃত্রিম বা রোগীর নিজের শরীর থেকে নেওয়া) লাগানো হয় যাতে মস্তিষ্কের আরও বেশি স্থান হয়।
* লামিনেকটমি (Laminectomy): কিছু ক্ষেত্রে, স্পাইনাল কর্ডের উপর চাপ কমাতে C1 কশেরুকার পিছনের অংশ (ল্যামিনা) অপসারণ করার প্রয়োজন হতে পারে।
* ডুরাপ্লাস্টি (Duraplasty): পোস্টেরিয়র ফোসা ডিকম্প্রেশনের সময়, ডুরা মেটার প্রসারিত করার জন্য একটি গ্রাফ্ট (প্যাচ) ব্যবহার করা হয়। এটি মস্তিষ্কের নীচের দিকে নেমে আসা অংশগুলির জন্য আরও জায়গা তৈরি করে এবং CSF-এর প্রবাহকে উন্নত করে।
* সেরেবেলার টনসিল রিসেকশন (Cerebellar Tonsil Resection): কিছু সার্জন ছোটমস্তিষ্কের (Cerebellar Tonsil) নীচে নেমে আসা অংশগুলির কিছু অংশ ছেঁটে ফেলেন যাতে চাপ কমানো যায়।
* শান্ট স্থাপন (Shunt Placement): যদি কেয়ারি মালফর্মেশনের কারণে হাইড্রোসেফালাস (মস্তিষ্কে অতিরিক্ত CSF জমা হওয়া) বা সিরিংক্স (স্পাইনাল কর্ডে ফ্লুইড-পূর্ণ গহ্বর) তৈরি হয়, তবে অতিরিক্ত ফ্লুইড নিষ্কাশনের জন্য শান্ট স্থাপন করার প্রয়োজন হতে পারে।
*Combined সার্জারি: অধিকাংশ ক্ষেত্রে উপরে বর্ণিত এক দুই তিন ও চার পদ্ধতি একসাথে করা হয়।
সার্জারির ঝুঁকি ও জটিলতা:
যেকোনো সার্জারির মতোই, কেয়ারি মালফর্মেশন সার্জারিরও কিছু ঝুঁকি এবং জটিলতা রয়েছে।
সার্জারির পরে:
নিয়মিত ফলো-আপ অ্যাপয়েন্টমেন্ট এবং ইমেজিং স্টাডির (যেমন এমআরআই) মাধ্যমে সার্জারির ফলাফল মূল্যায়ন করা হয়।
কেয়ারি মালফর্মেশনের সার্জারি বেশিরভাগ রোগীর উপসর্গ উপশম করতে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সহায়ক হতে পারে। তবে, এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে প্রতিটি রোগীর পরিস্থিতি আলাদা এবং সার্জারির সিদ্ধান্ত একজন নিউরোসার্জনের সাথে বিস্তারিত আলোচনার পরেই নেওয়া উচিত।